bbbbnnnn

কুরআন পৃষ্ঠা ক্যালকুলেটর

কুরআন পৃষ্ঠা ক্যালকুলেটর

ইন্দোপাক ১৫ লাইন মুদ্রণ অনুযায়ী

কিভাবে ব্যবহার করবেন:
১. পারা নম্বর লিখুন (১-৩০)
২. সেই পারার মধ্যে পৃষ্ঠা নম্বর লিখুন
৩. "পৃষ্ঠা বের করুন" বাটনে ক্লিক করুন
৪. "পৃষ্ঠা দেখুন অনলাইনে" দিয়ে কুরআন পড়ুন
নোট: অনলাইন ভার্শনে আরবি টেক্সট ও বাংলা অনুবাদ পাবেন

পারা নামসমূহ

১. আলিফ লাম মীম
২. সাইয়াকূলু
৩. তিলকার রুসুলু
৪. লান তানালুল বিররা
৫. ওয়াল মুহসানাত
৬. লা ইউহিব্বুল্লাহু
৭. ওয়া ইযা সামিউ
৮. ওয়া লাও আন্নানা
৯. কালিল মালাউ
১০. ওয়া'লামু
১১. ইয়া'তাযিরুনা
১২. ওয়া মা মিন দাব্বাতিন
১৩. ওয়া মা উবাররিউ
১৪. রুবামা
১৫. সুবহানাল্লাযী
১৬. কালা আলাম
১৭. ইক্তারাবাল লিন্নাসি
১৮. কাদ আফলাহা
১৯. ওয়া কালাল্লাযীনা
২০. আম্মান খালাকা
২১. উতলু মা উহিয়া
২২. ওয়া মাইঁ ইয়াকনুত
২৩. ওয়া মালিয়া
২৪. ফামানি আযলামু
২৫. ইলাইহি ইউরাদ্দু
২৬. হা মীম
২৭. কালা ফামা খাতবুকুম
২৮. কাদ সামিয়াল্লাহু
২৯. তাবারাকাল্লাযী
৩০. আম্মা ইয়াতাসাআলুন

যে সব কারণে জুমার খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়

আজকাল আমাদের মাঝে ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল জুমার খুতবা। জুমার খুতবা আরবিতে না বাংলায়? এ বিষয়ে ডা.জাকির নায়েক সহ আমাদের লা মাজহাবি ভাইদের মত হল খুতবা আপন আপন মাতৃভাষায় দেওয়া হবে। অন্যদিকে উম্মতের সকল ঊকামায়ে কেরাম একমত খুতবা আরবিতেই দিতে হবে।
যারা খুতবা মাতৃভাষায় বা বাংলায় দেওয়ার কথা বলেন তাদের যুক্তি হল খুতবা একটি সাপ্তাহিক বক্তৃতা এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলিহিসসালামের ভাষা আরবি ছিল তাই তিনি আরবিতে খুতবা দিতেন। আমাদের ভাষা বাংলা আমরা বাংলায় খুতবা দেব এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আরবিতে খুতবা দেওয়া হলে আমরা এর কিছুই বুঝিনা এতে করে খুতবার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে। তাই খুতবা বাংলা ভাষায় হওয়া উচিৎ ।
তাদের এসব কথার ভিত্তি হল خطبة শব্দের আভিধানিক অর্থ । কেননা خطبة এর অর্থ হল বক্তৃতা ।
যদি আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে সবকিছু ঠিক করা যেত তাহলে নামাজ না পড়ে দিনে পাঁচবার নিতম্ব দোলালেই হত । কেননা সালাতের আভিধানিক অর্থ নিতম্ব দোলানো।

এখন আমি খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেষ্টা করব কেন খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়।

১. খুতবা হল যিকরুল্লাহ বা আল্লাহর যিকির।
২. খুতবা নামজের স্থলাবিষিক্ত।
৩. খুতবা ইসলামের প্রতীক ।
৪. খুতবার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
এই চারটা বিষয় একটু খুলে বলি তাহলে আশা করি বিষয়গুলি স্পষ্ট হবে।

১. খুতবা সাধারন কোন বক্তৃতা নয় খুতবা হল আল্লাহ যিকির দেখুন কোরানের আয়াত কি বলে

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। সুরা জুমা আয়াত ৯
আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)

হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر

যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । (বোখারি ১/৩০১, মুসলিম হাদিস নং ৮০৫)

ফিকহের কিতাবগুলোতেও খুতবাকে যিকির বলা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা রহঃ বলেন কেঊ যদি শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলেও খুতবা আদায় হয়ে যাবে। খুতবার মধ্যে যত বড় বক্তৃতাই দেওয়া হোক না কেন সেটা খুতবা হিসেবে গন্য হবেনা যদি তার মধ্যে যিকরুল্লাহ না থাকে। আর যদি যিকরুল্লাহ ছাড়া আর কিছুই না থাকে তাহলেও সেটা খুতবা হিসেবে গন্য হবে। খুতবা যিকির বলেই আমরা দেখি যে ইমাম সাহেবগন খুতবা শুরু করেন আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং শেষ করেন কোরানের আয়াত পড়ে। এসকল আয়াত ও হাদিস থেকে একথাই প্রমান হয় যে খুতবা নিছক কোন বক্তৃতা বিবৃতি নয় বরং খুতবা হল যিকির আর যিকির কোন ভাষায় করবেন সেটা বলাই বাহুল্য।

২. জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।

হযরত ওমর ও আয়েশা রঃ থেকে বর্ণিত

حَدِيثُ عُمَرَ وَغَيْرِهِ أَنَّهُمْ قَالُوا إنَّمَا قَصُرَتْ الصَّلَاةُ لِأَجْلِ الْخُطْبَةِ

জুমার নামাজ কে খুতবার জন্য ছোট করে দেওয়া হয়েছে । (ইবনে হাজার আসকালানি তালখিসুল হাবির ২/১৭৬

كَانَتِ الْجُمُعَةُ أَرْبَعًا فَجُعِلَتِ الْخُطْبَةُ مَكَانَ الرَّكْعَتَيْنِ

জুমার নামাজ চার রাকাত ছিল অতঃপর খুতবাকে দুই রাকাতের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে বাইহাকি ৫২৫৮ নং

অর্থাৎ জুমার নামাজ চার রাকাত ফরজের স্থলে দুই রাকাত ফরজ রাখা হয়েছে আর দুই রাকাতের জায়গায়
খুতবাকে রাখা হয়েছে। খুতবা নামাজের মত বলেই আমরা দেখি যে খুতবার আগে আযান দেওয়া হয়,খুতবা চলা কালে কথাবার্তা এমনকি নামাজ পড়াও নিষেধ। যা নামাজের মধ্যেও নিষেধ। এছাড়া ও আরও অনেক বিধান রয়েছে যার দ্বারা বোঝা যায় খুতবা নামজের মত। নামজের মত নামাজ না কিন্তু ভুল বুঝবেন না কেউ । অথচ সাধারন বক্তৃতা লেকচারের ক্ষেত্রে এই বিধানগুলো প্রযোজ্য নয়। খুতবার জন্য এসকল বিধিবিধান ও নির্দেশনাবলী একথাই প্রমান করে যে খুতবা একটা গুরুত্তপুর্ন ইবাদাত, নিছক কোন বক্তৃতা বা লেকচার নয়।

৩.খুতবা ইসলামের একটা প্রতীক

অর্থাৎ আযান,ইকামাত, নামাজ, তাকবির এগুলো যেমন ইসলামের প্রতীক তেমনি খুতবাও একটি প্রতীক । আযান ইকামাত যেমন অন্য ভাষায় দেওয়া যায় না তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেওয়া যাবেনা। আজকে খুতবা বাংলায় দেওয়ার দাবী উঠছে কাল নামাজ বাংলায় করার দাবী উঠবে। উঠবে কি উঠেছে এখানকার কমেন্ট গুলো দেখুন

৪.খুতবার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

আরবি ভাষা মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা এ ভাষা শিক্ষা করা ফরজে কেফায়া। কারন কোরআন হাদিস বোঝা আমাদের কর্তব্য। কোরআন হাদিস বোঝার জন্য আরবি জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই আরবি শেখার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য আরবিতে খুতবা দেওয়া হয় । একজন আরবি না জানা ব্যাক্তির সামনে যখন প্রতি সপ্তাহে আরবিতে খুতবা দেওয়া হবে তখন তার সামনে নিজের অক্ষমতাটা বারবার স্পষ্ট হয়ে ধরা পরবে যা তাকে আরবি শিখতে উৎসাহিত করবে।

মাযহাব ও তাকলিদের স্বরূপ

একথা প্রতিটি মুসলমান স্বীকার করবেন যে, দীনের মুল দাওয়াত ও আহবান হল আল্লাহর আনুগত্য, মূলত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত শুধু এ কারনেই তিনি তার প্রতিটি কথা ও কর্মে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলীকেই তুলে ধরেছেন। কোনটি হালাল কোনটি হারাম কোনটি বৈধ কোনটি অবৈধ ইত্যকার সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করতে হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তদীয় রাসুল ব্যতিত অন্য কার আনুগত্যের কথা বলবে এবং যে ব্যক্তি অন্য কাউকে প্রকৃত ও সরাসরি আনুগত্যের যোগ্য সত্তা বলে বিশ্বাস করবে সে তো মুসলমানই থাকবেনা। তাই সকল মুসলমানকে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরন করতে হবে। মেনে চলতে হবে কুরআন সুন্নাহ নিসৃত সকল বিধি বিধান।

তবে এও স্মরণ রাখতে হবে, পবিত্র কোরআনে কিছু বিধান এমন আছে যা যে কোন মামুলী শিক্ষিত ব্যাক্তিও বুঝতে সক্ষম। এসব বিধানে কোনরূপ সংক্ষিপ্ততা কিংবা অস্পষ্টতা নেই। নেই বাহ্যিক কোন বিরোধ সংঘাতও। বরং যে কোন পাঠক এর যথার্থ মর্ম উপলব্ধি করতে পারে- এজন্যে কোন বেগ পেতে হয়না! যেমন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করছেন-
وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا
তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। (হুজরাত)

আরবি জানে এমন পাঠক পড়া মাত্র এর মর্ম বুঝে ফেলবে। কারন এই আয়াতে কোন অস্পষ্টতা নেই আবার অন্য কোন দলিলের সাথে সংঘাতপূর্ণও নয়।

এই রকম একটি হাদিস দেখুন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

لافضل لعرب علي العجم
কোন আরব কোন অনারবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়।

এই হাদিসের মর্মও খুব স্পষ্ট এতে কোন জটিলতা নেই । আরবি জানা যে কোন পাঠক এর মর্ম বুঝতে সক্ষম।

পক্ষান্তরে কোরআন ও সুন্নাহর এমন অনেক বিধান আছে যাতে সংক্ষিপ্ততা আছে, আছে অস্পষ্টতাজনিত জটিলতা। আবার কিছু বিধান এমনও আছে যেগুলো বাহ্যিকভাবে পবিত্র কোরানেরই অন্য আয়াত বা হাদিসের সাথে বিরোধপূর্ণ মনে হয়। উপমা লক্ষ্য করুন-

কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন

وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ

আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। ২/২২৮

এই আয়াতটিতে তালাকপ্রাপ্তা নারীদের ইদ্দতের সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে। আর এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘কুরু’ শব্দটিকে। কিন্তু আরবি ভাষায় ‘কুরু’ শব্দটি মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব এবং তৎপরবর্তী পবিত্রতা (طهر) এর অর্থেও ব্যবহার হয়। আমরা যদি শব্দটিকে প্রথম অর্থে ব্যবহার করি তাহলে আয়াতের মর্ম দাঁড়াবে,তালাকপ্রাপ্তা নারীগণের ইদ্দতসীমা হল তিনটি ঋতুস্রাব। আর যদি দ্বিতীয় অর্থে নিই। তাহলে এর অর্থ হবে তালাকপ্রাপ্তা কোন নারী তিনটি ‘পবিত্রকাল’ অতিক্রম করলেই তার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হল আমরা ‘কুরু’ শব্দটিকে কোন অর্থে নেব?

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

" مَنْ لَمْ يَذَرِ الْمُخَابَرَةَ، فَلْيَأْذَنْ بِحَرْبٍ مِنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ

যে ব্যক্তি বর্গা লেনদেন বর্জন না করবে সে যেন আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নেয়। আবু দাউদ ২৯৬০/৩৪০৬

আলোচ্য হাদিসটিতে বর্গা লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ বর্গা লেনদেনের অনেক ধরন হতে পারে। তার সবগুলই কি নিষিদ্ধ?এ বিষয়ে হাদিসটি নিরব কোন কোন ধরন বৈধ আর কোন ধরন অবৈধ তাও বলা হয়নি হাদিসটিতে। বরং বর্গা লেনদেনের নানা রুপ ও তার বিস্তারিত বিধান সম্পর্কে হাদিসের বক্তব্য অস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত। তাই স্বভাবত প্রশ্ন জাগে লেনদেনটা কি সম্পূর্ণ হারাম নাকি তাতে প্রকার বিন্যাসসহ বিস্তারিত বিভিন্ন ধরনের বিধান আছে?


বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ দুটি হাদিস দেখুন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

كُلُّ مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ

যার ইমাম আছে ইমামের কেরাতই তার কিরাত (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৩৭০৪/৩৮১৯

একই অর্থের আরেকটি হাদিস দেখুনঃ

عن عطاء بن يسار أنه أخبره أنه سأل زيد بن ثابت عن القراءة مع الإمام فقال لا قراءة مع الإمام فى شىء.

আতা ইবনে ইয়াসার হজরত যায়েদ ইবনে সাবেত রাঃ কে কিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি বললেন ইমামের সাথে কোন কিছুতেই কিরাত নেই। মুসলিম ১৩২৬

এই হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা যায় কেউ ইমামের পিছনে নামজ পড়লে ইমাম যখন কেরাত পড়বেন তখন সে নীরব থাকবে।

অন্য আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب
যে ব্যাক্তি সুরা ফাতেহা পড়বে না তার নামাজ ই হবেনা । বুখারি ৭২৩

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় প্রত্যেকেরই সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। এখন এই দুটি হাদিসের বক্তব্য থেকে স্বভাবতই প্রশ্ন হয় আমরা কি প্রথম হাদিসকে মুল হিসাবে গ্রহন করে একথা বলব, দ্বিতীয় হাদিসটিতে ইমাম ও একাকী নামাযির কথা বলা হয়েছে, এবং মুক্তাদি বা জামতে নামাজ আদায়কারীর কথা বলা হয় নাই। নাকি দ্বিতীয় হাদিস কে মুল হিসেবে গ্রহন করে এ কথা বলব যে প্রথম হাদিসে যে কেরাতের কথা বলা হয়েছে সেটা সুরা ফাতিহা ব্যাতিত অন্য কেরাতের কথা বলা হয়েছে। এখানে সুরা ফাতিহার কথা বলাই হয়নি। কোনটা বলব আমরা?


আপনি আবশ্যই লক্ষ্য করেছেন কোরআন ও হাদিস থেকে সমাধান ও বিধি বিধান বের করতে গেলে এ জাতীয় জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এখন এই জটিলতা থেকে উদ্ধারের একটা পথ এও হতে পারে, আমরা আমদের লব্ধ জ্ঞান ও বিবেচনার উপর ভিত্তি করে নিজেরাই কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব এবং সে অনুযায়ী আমল করা শুরু করব।

উত্তরণের আরেকটি পথ এও হতে পারে, এ ধরনের জটিল বিষয়ে নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং অতীতের দিকে ফিরে তাকাব, দেখব আমাদের পূর্বসূরিগণ কোরআন হাদিসের এই জাতীয় জটিল ক্ষেত্রে কী বলেছেন। অতপর তাদের মধ্যে যারা কোরআন হাদিসের জ্ঞান ও উপলব্দিতে ভিন্ন স্বকীয়তা ও পরিপক্কতায় উত্তীর্ণ বলে গন্য আমরা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভরসা করব। তারা যা বুঝেছেন এবং আমল করেছেন আমরা সে অনুযায়ী আমল করব ।

যদি ইনসাফ ও বাস্তবতার বিচারে কিছু বলতে হয় তাহলে আমার মনে হয় এতে কার দ্বিমত থাকার কথা নয় উল্লিখিত দুটি পথের মধ্যে প্রথম পথটি খুবই আশঙ্কাপূর্ণ ও ভয়ানক। আর দ্বিতীয় পথটি হল সতর্কতাপূর্ণ ও নিরাপদ। এটা কোন বিনয়তাড়িত কথা নয় বরং এ এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা যে, ইলম ও জ্ঞানের প্রাচুর্য, স্মৃতি ও মেধার তীক্ষ্ণতা, দীনদারী, সততা ও আল্লাহভিরুতার বিচারে আমরা এতটাই রিক্তহস্ত যে, ইসলামের প্রথম কালের আলিমগনের সাথে আমাদের কোন তুলনাই হয় না, তাছাড়া যে বরকতপূর্ণ পরিবেশে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল তারা ছিলেন সে কাল ও পরিবেশের নিকটবর্তী। কালের এই নৈকট্যতার ফলে কোরআন সুন্নাহর মর্ম বুঝাও তাদের জন্য সহজ ছিল।

পক্ষান্তরে কোরআন অবতীর্ণ হবার পর কালের এত দীর্ঘ ব্যবধানে এসে আমরা জন্মেছি যে, আমাদের জন্য কোরআন অবতরনকালীন পরিপূর্ণ প্রেক্ষাপট, তৎকালীন পরিবেশ, যাপিত জীবনবোধ, কথাবার্তার ধরন সরাসরি উপলব্ধি করাও আমাদের জন্য কঠিন। কারো কথার মূলমর্ম উপলব্ধি করার জন্য এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারনা লাভ করা একটি অপরিহার্য বিষয়।

এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা যদি আমাদের নিজেদের জ্ঞান ও বিবেচনার উপর ভরসা না করে বরং বিভিন্ন ব্যাখ্যা সম্পন্ন জটিলতাপূর্ণ বিধানাবলীর ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বসূরি মনীষীগণের কারো মত ও ফায়সালা কে গ্রহন করে নিই তাহলেই বলা হবে আমরা অমুক আলেমের তাকলিদ করছি।
এতাই তাকলিদের হাকিকত ও প্রকৃত স্বরূপ। আমি যদি আমার মনের ভাবকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়ে থাকি তাহলে আশা করি আপনি অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন কোন ইমাম বা মুজতাহিদের তাকলিদ কেবল ঐ সকল ক্ষেত্রে হয়ে থাকে যে সকল ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহ থেকে কোন মাসালা বুঝার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোরআন সুন্নাহর অকাট্য বিধানাবলি অথবা যেসবক্ষেত্রে কোনরূপ সংক্ষিপ্ততা অস্পষ্টতা কিংবা পরস্পর বিরোধিতার মত কোন জটিলতা ও সমস্যা নেই সেসন ক্ষেত্রে কোন ইমাম বা মুজতাহিদের আনুগত্য করার প্রয়োজন নেই।

আল্লাম ইবনে হুমাম ও ইবনে নুজাইম তাকলিদের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে –
এমন ব্যক্তি যার বক্তব্য শরিয়াতের উৎসসমুহের অন্তর্ভুক্ত নয়- কোন রুপ দলিল দাবী না করেই তার কথার উপর আমল করাকে তাকলিদ বলে।

এই সংখিপ্ত আলোচনার পর এবার আপনিই একটু ইনসাফের সাথে চিন্তা করে দেখুন এই তাকলিদের মধ্যে এমন কি আছে যাকে পাপা কিংবা শিরক বলা যায়?

একটা উপমা দিই ! আমাদের দেশে যে সংবিধান আছে দেশের কোটি কোটি নাগরিকের মধ্যে তো এমন অসংখ্য নাগরিক আছে যারা এই আইন গ্রন্থ দেখে আইন পালনে অক্ষম, যারা নিরক্ষর তাদের তো কোন কথাই নেই , যারা শিক্ষিত উচ্চমাত্রার ইংরেজি ও জানেন, কিন্তু আইনের ছাত্র নন তারাও তে সরাসরি আইন বুঝে ফেলবেন এমন সাহস করেন না বরং কোন আইনের প্রয়োজন হলে বিজ্ঞ কোন আইনজীবী বা উকিলের কাছে যান। তার কাছ থেকে বুঝে সে অনুযায়ী কাজ করেন। আচ্ছা কোন সুস্থ মানুষ কি বলবে যে সে ঐ আইনজিবিকে আইন প্রণেতা মনে করছে। তাকে যাচ্ছেতা আইন প্রনয়নের অধিকার দিয়ে দিয়েছে। কিংবা রাষ্ট্রীয় আইনের পরিবর্তে উকিলদের কে শাসক হিসেবে মেনে নিয়েছে। সুস্থ মানুষ এমন কথা বলবে?

কোরআন ও সুন্নাহের বিষয়টি ও ঠিক এমনই! কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মুজতাহিদ ইমামগন থেকে সাহায্য নেয়া, তাদের উপর ভরসা করাকেই তাকলিদ বলে। অতএব যারা তাকলিদ করে তাদের প্রতি এই অভিযোগ আরোপ করা একান্তই যে, তারা কোরআন সুন্নাহ বাদ দিয়ে ইমাম গনের অনুসরন করে।

এই লেখাটি আল্লা্মা তাকি উসমানীর তাকলিদ কি শরঈ হাইসিয়্যাত এর ভাবানুবাদ

মাযহাব ও ইমামদের মতবিরোধ হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়

প্রথমে একটা মাসআলা বলছি তারপর আসছি মূল কথায়। আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের কিছু দিন অপেক্ষা করতে হয়। যাকে আমরা ইদ্দত বলি।এই ইদ্দতের সময়সীমা কি এ নিয়ে ইমামদের মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর মত হল মহিলারা তিনটি ঋতুস্রাব (حيض হায়য)অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। আর ইমাম শাফিঈ (রহঃ) এর মত হল মহিলারা ঋতু পরবর্তী তিনটি পবিত্রকাল (طهر তুহর) অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে।

তাদের উভয়ের দলিল কোরআনের এই আয়াতঃ
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। (সুরা বাকারা ২২৮)


আয়াতের মধ্যকার قُرُوءٍ (কুরু) শব্দটি আরবিতে দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়।
এক. حيض বা ঋতুস্রাব।
দুই. طهر বা ঋতু পরবর্তী পবিত্রকাল।

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ ) قُرُوءٍ কুরুর অর্থ করেছেন حيض (হায়য)। তাই তিনি ইদ্দতের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন তিন হায়য বা তিনটি ঋতুস্রাব। আর ইমাম শাফিঈ (রহঃ) অর্থ করেছেন طهر (তুহর)। এবং ইদ্দতের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন তিন তুহর বা তিনটি পবিত্রকাল। নিজের মতের পক্ষে তারা একাধিক দলিল ও এনেছেন। আমি সদিকে যাচ্ছিনা।

এখন আসি মূল কথায়, আরবিতে قُرُوءٍ শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয় এটা কি আল্লাহর জানা ছিলনা ? তাহলে কেন তিনি কোন একটি অর্থকে নির্দিষ্ট না করে এমন অনির্দিষ্ট করে বলেছেন যা মতবিরোধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। তাহলে কি তিনি এমটি ই চান যে, চিন্তা গবেষণা করার পর দলিল প্রমানের ভিত্তিতে যার কাছে যেটা সঠিক মনে হবে সে সেটা গ্রহন করবে। যদি এমনটি ই চান তাহলে কেন? শুনুন তাঁর কাছেই
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না (সুরা বাকারা ১৮৫)


যদি আল্লাহ একটা অর্থ নির্দিষ্ট করে দিতেন তাহলে হুকুম টা সংকীর্ণ হয়ে যেত। মহিলাগনএখনকার মত حيض এবং طهر উভয়টির মাধ্যমে ইদ্দত পালন করতে পারতেন না। কিন্তু অনির্দিষ্ট করে বলার কারনে এতে কিছুটা ব্যাপকতা এসেছে যা আমরা পেয়েছি ইমামদের মতবিরোধের ফলে। তাই আজ মহিলাগন দুইভাবেই ইদ্দত পালন করতে পারছে।
তাই এ কথা বলতে দ্বিধা নাই যে ইমামদের মতবিরোধ হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়।

জামাত নাকি ইসলাম

বিভিন্ন ব্লগ ঘুরে ঘুরে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম আমরা অনেকেই জামাত কে আঘাত করতে গিয়ে ইসলামকে আঘাত করে বসি যা অত্যন্ত দুখজনক ও আপত্তিকর।জামাত ধর্ম ব্যবসায়ী,রাজাকার,মোনাফেক চরিত্রের ,তাদের অনেক বিশ্বাস ইসলামের সাথে সমঞ্জস্যশীল নয় এগুলো আমরা মানি এবং এগুলোর সমালোচনা করা উচিত এটা ঠিক আছে । কিন্তু জামাত তাদের অপকর্ম কে ইসলাম বলে চালিয়ে দিলে ইসলাম সমালোচিত হবে কেন। তাই আমরা সমালোচনা করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখব যেন ইসলামকে আঘাত করে না বসি।হ্যা কিছু লোক আছে যারা ,জামাতকে মাধ্যম বানিয়ে ইসলামের সমালোচনায় লিপ্ত হওয়াকে সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করবে, তাদের কথা ভিন্ন।তাদের কে ঘেউ ঘেউ করতে দিন।কিন্তু সমস্যা হল সরলপ্রাণ কিছু মুসলমানকে নিয়ে যারা বিষয়টা বুঝতে না পেরে ইসলামের সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে নিজের ক্ষতি ডেকে আনছে।আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই যদি জামাতের কেউ চাঁদা তুলতে গিয়ে কোরানের এই আয়াত দারা প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করে "তোমরা কল্যাণকর কাজে একে অন্যকে সাহায্য কর" তাহলে ইসলামকে আপনি চাঁদাবাজির ধর্ম বলতে পারেন না।জামাতিরা দাড়ি রাখে বলে আমরা দাড়িকে অবজ্ঞা করব কেন দাড়িটা জামাতিদের কিছু না দাড়ি রাখা ইসলামের নির্দেশ।জামাত তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে জিহাদ বলে চালিয়ে দিল আর আমরাও বলতে শুরু করলাম জিহাদ মানে সন্ত্রাস এটা মেনে নেয়া যায় না।আপনার বাবা প্যান্ট শার্ট পরেন, আরেক প্যান্ট শার্ট পরা লোক ধর্ষণ করেছে বলে আপনার বাবাকে আপনি ধর্ষক বলেন না। তেমনি জামাত অপকর্ম করলে ইসলামকে দায়ী করবেন কেন? তাই আমি অনুরোধ করব কিছু লিখার আগে ঠিক করে নিন আপনার টার্গেট জামাত নাকি ইসলাম।

মা

এই ব্লগ আমি খুলেছি শুধু আমার মা কে নিয়ে লিখব বলে।মা আমার আজ বড় অসুস্থ।যারা আমার মা কে দেখবে বলে কথা দিয়েছিল আজ তারাই মা কে কষ্ট দিচ্ছে ।আপন সন্তানেরা আজ মাযের বুক চিড়ে খাচ্ছে।মাগো কেদোনা তোমার দামাল ছেলেরা আসছে তারই তোমাকে উদ্ধার করবে ঐপাপিষ্টদের কবল থেকে।