আজকাল আমাদের মাঝে ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল জুমার খুতবা। জুমার খুতবা আরবিতে না বাংলায়? এ বিষয়ে ডা.জাকির নায়েক সহ আমাদের লা মাজহাবি ভাইদের মত হল খুতবা আপন আপন মাতৃভাষায় দেওয়া হবে। অন্যদিকে উম্মতের সকল ঊকামায়ে কেরাম একমত খুতবা আরবিতেই দিতে হবে।
যারা খুতবা মাতৃভাষায় বা বাংলায় দেওয়ার কথা বলেন তাদের যুক্তি হল খুতবা একটি সাপ্তাহিক বক্তৃতা এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলিহিসসালামের ভাষা আরবি ছিল তাই তিনি আরবিতে খুতবা দিতেন। আমাদের ভাষা বাংলা আমরা বাংলায় খুতবা দেব এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আরবিতে খুতবা দেওয়া হলে আমরা এর কিছুই বুঝিনা এতে করে খুতবার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে। তাই খুতবা বাংলা ভাষায় হওয়া উচিৎ ।
তাদের এসব কথার ভিত্তি হল خطبة শব্দের আভিধানিক অর্থ । কেননা خطبة এর অর্থ হল বক্তৃতা ।
যদি আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে সবকিছু ঠিক করা যেত তাহলে নামাজ না পড়ে দিনে পাঁচবার নিতম্ব দোলালেই হত । কেননা সালাতের আভিধানিক অর্থ নিতম্ব দোলানো।
এখন আমি খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেষ্টা করব কেন খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়।
১. খুতবা হল যিকরুল্লাহ বা আল্লাহর যিকির।
২. খুতবা নামজের স্থলাবিষিক্ত।
৩. খুতবা ইসলামের প্রতীক ।
৪. খুতবার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
এই চারটা বিষয় একটু খুলে বলি তাহলে আশা করি বিষয়গুলি স্পষ্ট হবে।
১. খুতবা সাধারন কোন বক্তৃতা নয় খুতবা হল আল্লাহ যিকির দেখুন কোরানের আয়াত কি বলে
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। সুরা জুমা আয়াত ৯
আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)
হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر
যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । (বোখারি ১/৩০১, মুসলিম হাদিস নং ৮০৫)
ফিকহের কিতাবগুলোতেও খুতবাকে যিকির বলা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা রহঃ বলেন কেঊ যদি শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলেও খুতবা আদায় হয়ে যাবে। খুতবার মধ্যে যত বড় বক্তৃতাই দেওয়া হোক না কেন সেটা খুতবা হিসেবে গন্য হবেনা যদি তার মধ্যে যিকরুল্লাহ না থাকে। আর যদি যিকরুল্লাহ ছাড়া আর কিছুই না থাকে তাহলেও সেটা খুতবা হিসেবে গন্য হবে। খুতবা যিকির বলেই আমরা দেখি যে ইমাম সাহেবগন খুতবা শুরু করেন আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং শেষ করেন কোরানের আয়াত পড়ে। এসকল আয়াত ও হাদিস থেকে একথাই প্রমান হয় যে খুতবা নিছক কোন বক্তৃতা বিবৃতি নয় বরং খুতবা হল যিকির আর যিকির কোন ভাষায় করবেন সেটা বলাই বাহুল্য।
২. জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।
হযরত ওমর ও আয়েশা রঃ থেকে বর্ণিত
حَدِيثُ عُمَرَ وَغَيْرِهِ أَنَّهُمْ قَالُوا إنَّمَا قَصُرَتْ الصَّلَاةُ لِأَجْلِ الْخُطْبَةِ
জুমার নামাজ কে খুতবার জন্য ছোট করে দেওয়া হয়েছে । (ইবনে হাজার আসকালানি তালখিসুল হাবির ২/১৭৬
كَانَتِ الْجُمُعَةُ أَرْبَعًا فَجُعِلَتِ الْخُطْبَةُ مَكَانَ الرَّكْعَتَيْنِ
জুমার নামাজ চার রাকাত ছিল অতঃপর খুতবাকে দুই রাকাতের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে বাইহাকি ৫২৫৮ নং
অর্থাৎ জুমার নামাজ চার রাকাত ফরজের স্থলে দুই রাকাত ফরজ রাখা হয়েছে আর দুই রাকাতের জায়গায়
খুতবাকে রাখা হয়েছে। খুতবা নামাজের মত বলেই আমরা দেখি যে খুতবার আগে আযান দেওয়া হয়,খুতবা চলা কালে কথাবার্তা এমনকি নামাজ পড়াও নিষেধ। যা নামাজের মধ্যেও নিষেধ। এছাড়া ও আরও অনেক বিধান রয়েছে যার দ্বারা বোঝা যায় খুতবা নামজের মত। নামজের মত নামাজ না কিন্তু ভুল বুঝবেন না কেউ । অথচ সাধারন বক্তৃতা লেকচারের ক্ষেত্রে এই বিধানগুলো প্রযোজ্য নয়। খুতবার জন্য এসকল বিধিবিধান ও নির্দেশনাবলী একথাই প্রমান করে যে খুতবা একটা গুরুত্তপুর্ন ইবাদাত, নিছক কোন বক্তৃতা বা লেকচার নয়।
৩.খুতবা ইসলামের একটা প্রতীক
অর্থাৎ আযান,ইকামাত, নামাজ, তাকবির এগুলো যেমন ইসলামের প্রতীক তেমনি খুতবাও একটি প্রতীক । আযান ইকামাত যেমন অন্য ভাষায় দেওয়া যায় না তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেওয়া যাবেনা। আজকে খুতবা বাংলায় দেওয়ার দাবী উঠছে কাল নামাজ বাংলায় করার দাবী উঠবে। উঠবে কি উঠেছে এখানকার কমেন্ট গুলো দেখুন
৪.খুতবার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
আরবি ভাষা মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা এ ভাষা শিক্ষা করা ফরজে কেফায়া। কারন কোরআন হাদিস বোঝা আমাদের কর্তব্য। কোরআন হাদিস বোঝার জন্য আরবি জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই আরবি শেখার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য আরবিতে খুতবা দেওয়া হয় । একজন আরবি না জানা ব্যাক্তির সামনে যখন প্রতি সপ্তাহে আরবিতে খুতবা দেওয়া হবে তখন তার সামনে নিজের অক্ষমতাটা বারবার স্পষ্ট হয়ে ধরা পরবে যা তাকে আরবি শিখতে উৎসাহিত করবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন